রাজধানীর প্রায় ৭০ ভাগ রাস্তার অবস্থা বেহাল। বিশেষ করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বেশ কিছু সড়ক খানাখন্দে ভরা। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। আবার অনেক সড়কে পিচঢালাই উঠে গেছে। শুকনার সময় ধুলার কারণে এসব রাস্তায় চলাফেরা দুষ্কর হয়ে পড়ে। সড়কের এমন বেহাল দশায় নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধুলাবালি এবং জমা পানির কারণে শ^াসকষ্টসহ নানা রোগের বিস্তার ঘটছে। অন্যদিকে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা ও সিটি করপোরেশনের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। সিটির রাস্তা মেরামত ও নির্মাণে প্রতিবছর যে অর্থ ব্যয় হয়, তার সঠিক ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। প্রতি অর্থবছর সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়নে বিপুল অর্থ বরাদ্দ ও খরচ করে দুই সিটি করপোরেশন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বাজেটের তথ্যানুযায়ী সড়ক এবং ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কাজে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৫২১ কোটি টাকা। খরচ হয়েছে ২৮২ কোটি ১০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৭০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তার মধ্যে সড়ক, ফুটপাত ও সারফেস ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কারে বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকা। আর সড়ক খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সড়ক এবং ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৫৬ কোটি ১০ লাখ। খরচ হয়েছে ২০৩ কোটি ৯০ লাখ। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ৪২৪ কোটি ৫ হাজার টাকা। তার মধ্যে খননকৃত রাস্তা সংস্কারে গত অর্থবছরে খরচ হয়েছে ৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এবার এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৮ কোটি টাকা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গুলশান-বনানী এবং প্রধান সড়কগুলো ছাড়া অলিগলির প্রায় প্রতিটি সড়ক খানাখন্দে ভরা। তেজগাঁও এলাকার বিএসটিআই গলির সড়কে কোথাও ৩ থেকে ৪ ফুট গর্ত হয়ে গেছে। শুধু এই সড়কই না। তেজগাঁও এলাকার অধিকাংশ সড়কই এখন খানাখন্দে ভরা। অন্যদিকে মোহাম্মদপুরের প্রায় সব রাস্তাই এখন ভাঙাচোরা। দুই মাস আগে যেসব সড়ক সংস্কার করা হয়েছিল, সেগুলো নতুন করে আবার কাটা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার পানির লাইন স্থাপনে মোহাম্মদপুরের বেশির ভাগ এলাকার রাস্তা কাটা হয়েছে। এর মধ্যে তাজমহল রোড, শেরশাহসুরী রোড, টিক্কাপাড়া, আদাবর, মোহাম্মদীয়া হাউজিং, চাঁদ উদ্যান হাউজিং, শাহজাহান রোড, ইকবাল রোড, গজনবী রোড, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, চার রাস্তার মোড়, লালমাটিয়া, কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকার রাস্তা কাটা। এ ছাড়া ধানমন্ডির ভেতরের সড়কগুলোও কাটা হয়েছে।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টে পটপরিবর্তন এবং এরপর দুই সিটি মেয়রকে অপসারণের পর সব কাজে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। উন্নয়ন কাজ নেই বললেই চলে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হলেও এক মাসের মধ্যে তিনি অবসরে চলে যান। গত বুধবার আবার নতুন প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তিনি এখনো দায়িত্ব বুঝে নেননি। তাই দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারা শুধু রুটিন কাজ করছেন। একই চিত্র উত্তর সিটি করপোরেশনেও। সেখানেও কর্মকর্তারা রুটিন কাজের বাইরে কোনো কাজ করছেন না।
দায়িত্বশীলরা জনভোগান্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না মন্তব্য করে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সাধারণত জুন মাসের বাজেটের পর সংস্কার কাজগুলো হয়। রাজনৈতিক ডামাডোলের কারণে এবার সেই সময়টা নষ্ট হয়েছে। কোনো কাজই হয়নি। ফলে জনভোগান্তি চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। নতুন করে প্রশাসক নিয়োগ হলেও তারা জনভোগান্তির বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এখন যারাই দায়িত্বে বসছেন, তারা ব্যস্ত কে দুর্নীতিবাজ, কে কার দোসর- সেগুলো চিহ্নিত করতে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের প্রধান কাজ হওয়া দরকার জনভোগান্তি নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া। কর্মকর্তারা অজুহাত দিচ্ছেন মেয়র নাই, প্রশাসক নাই। কিন্তু তারা বেতন তো নিচ্ছেন। তা হলে জনভোগান্তির কাজ কেন প্রাধিকার পাবে না? জনভোগান্তিকে মাথায় নিয়ে রাস্তা সংস্কার ও ডেঙ্গুবিরোধী কার্যক্রম চালানো দরকার।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, মোহাম্মদপুর এলাকায় ঢাকা ওয়াসার ডিএমএ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। তারা অনুমতি নিয়ে রাস্তা কেটেছে। কোনো একটি সংস্থা পুরো কাজ শেষ করে লিখিতভাবে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর না করা পর্যন্ত মেরামত কাজ করা যায় না। সে জন্য এসব এলাকার রাস্তার অবস্থা বেশি খারাপ। অন্যান্য এলাকায় যেসব রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পের অধীনে কাজ হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুর রোডের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। সায়েন্সল্যাব, কাঁটাবন রোড, শাহবাগ থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত সড়কও বেহাল দশা। আজিমপুর এলাকার ভেতরের রাস্তা, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া, মগবাজার, মৌচাক, নন্দীপাড়া, মিরপুর, পুরান ঢাকার অধিকাংশ রাস্তা, লালবাগ এলাকায়ও একই অবস্থা। আজ শনিবার অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা লালবাগ এলাকায় যাবেন বলে তড়িঘড়ি করে রাস্তা মেরামত করছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। যেখানে গর্ত হয়েছে, সেখানে অস্থায়ীভাবে ইট-সুরকি দিয়ে সংস্কার চলছে। ডিএসসিসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে ভাঙা রাস্তাগুলোর কাজ হয়নি। ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া যায়নি। আবার কিছু কিছু ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে গিয়েছিলেন। তাদেরকে খুঁজে এনে কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রাস্তার অবস্থা সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। এর মধ্যে অতিবৃষ্টিতে অনেক রাস্তা নষ্ট হয়েছে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছি। আশা করি শিগগিরই রাস্তাগুলো ঠিক হবে।

রাজধানীর প্রায় ৭০ ভাগ রাস্তার অবস্থা বেহাল দশা
- আপলোড সময় : ০৫-১০-২০২৪ ১২:৩৬:২৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-১০-২০২৪ ১২:৩৬:২৮ পূর্বাহ্ন


নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ